Thursday, November 10, 2016

সালাতের সংক্ষিপ্ত নিয়ম।

بسم الله الرحمن الرحيم

রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন,

صَلُّوْا كَمَا رَأَيْتُمُوْنِىْ أُصَلِّىْ،

‘তোমরা ছালাত আদায় কর সেভাবে,

যেভাবে আমাকে ছালাত আদায় করতে দেখছ’...।[1]

ছালাতের সংক্ষিপ্ত নিয়ম ) (مختصر صفة صلاة الرسولصـ

(১) তাকবীরে তাহরীমা : ওযূ করার পর ছালাতের সংকল্প করে ক্বিবলামুখী দাঁড়িয়ে ‘আল্লা-হু আকবর’ বলে দু’হাত কাঁধ বরাবর উঠিয়ে তাকবীরে তাহরীমা শেষে বুকে বাঁধবে। এ সময় বাম হাতের উপরে ডান হাত কনুই বরাবর রাখবে অথবা বাম কব্জির উপরে ডান কব্জি রেখে বুকের উপরে হাত বাঁধবে। অতঃপর সিজদার স্থানে দৃষ্টি রেখে বিনম্রচিত্তে নিম্নোক্ত দো‘আর মাধ্যমে মুছল্লী তার সর্বোত্তম ইবাদতের শুভ সূচনা করবে।-

اَللَّهُمَّ بَاعِدْ بَيْنِيْ وَبَيْنَ خَطَايَايَ كَمَا بَاعَدْتَ بَيْنَ الْمَشْرِقِ وَالْمَغْرِبِ اَللَّهُمَّ نَقِّنِيْ مِنَ الْخَطَايَا كَمَا يُنَقَّى الثَّوْبُ الْأَبْيَضُ مِنَ الدَّنَسِ، اَللَّهُمَّ اغْسِلْ خَطَايَايَ بِالْمَاءِ وَالثَّلْجِ وَالْبَرَد-

উচ্চারণ : আল্লা-হুম্মা বা-‘এদ বায়নী ওয়া বায়না খাত্বা-ইয়া-ইয়া, কামা বা-‘আদতা বায়নাল মাশরিক্বি ওয়াল মাগরিবি। আল্লা-হুম্মা নাকক্বিনী মিনাল খাত্বা-ইয়া, কামা ইউনাকক্বাছ ছাওবুল আব্ইয়াযু মিনাদ দানাসি। আল্লা-হুম্মাগ্সিল খাত্বা-ইয়া-ইয়া বিল মা-য়ি ওয়াছ ছালজি ওয়াল বারাদি’।

অনুবাদ : হে আল্লাহ! আপনি আমার ও আমার গোনাহ সমূহের মধ্যে এমন দূরত্ব সৃষ্টি করে দিন, যেমন দূরত্ব সৃষ্টি করেছেন পূর্ব ও পশ্চিমের মধ্যে। হে আল্লাহ! আপনি আমাকে পরিচ্ছন্ন করুন গোনাহ সমূহ হ’তে, যেমন পরিচ্ছন্ন করা হয় সাদা কাপড় ময়লা হ’তে। হে আল্লাহ! আপনি আমার গুনাহ সমূহকে ধুয়ে ছাফ করে দিন পানি দ্বারা, বরফ দ্বারা ও শিশির দ্বারা’।[2]

একে ‘ছানা’ বা দো‘আয়ে ইস্তেফতাহ বলা হয়। ছানার জন্য অন্য দো‘আও রয়েছে। তবে এই দো‘আটি সর্বাধিক বিশুদ্ধ।

(২) সূরায়ে ফাতিহা পাঠ : দো‘আয়ে ইস্তেফতা-হবা ‘ছানা’ পড়ে আ‘ঊযুবিল্লাহ  বিসমিল্লাহ সহ সূরায়ে ফাতিহা পাঠ করবে এবং অন্যান্য রাক‘আতে কেবল বিসমিল্লাহ বলবে। জেহরী ছালাত হ’লে সূরায়ে ফাতিহা শেষে সশব্দে ‘আমীন’ বলবে।

সূরায়ে ফাতিহা (মুখবন্ধ) সূরা-১, মাক্কী :

أَعُوْذُ بِا للہِ مِنَ الشَّيْطَانِ الرَّجِيْمِ بِسْمِ اللہِ الرَّحْمٰنِ الرَّحِیْمِ

بِسْمِ اللَّهِ الرَّحْمَنِ الرَّحِيمِ (1) الْحَمْدُ لِلَّهِ رَبِّ الْعَالَمِينَ (2) الرَّحْمَنِ الرَّحِيمِ (3) مَالِكِ يَوْمِ الدِّينِ (4) إِيَّاكَ نَعْبُدُ وَإِيَّاكَ نَسْتَعِينُ (5) اهْدِنَا الصِّرَاطَ الْمُسْتَقِيمَ (6) صِرَاطَ الَّذِينَ أَنْعَمْتَ عَلَيْهِمْ غَيْرِ الْمَغْضُوبِ عَلَيْهِمْ وَلَا الضَّالِّينَ (7)

উচ্চারণ : আ‘ঊযু বিল্লা-হি মিনাশ শায়ত্বা-নির রজীম। বিসমিল্লা-হির রহমা-নির রহীম। (১) আলহাম্দু লিল্লা-হি রবিবল ‘আ-লামীন (২) আর রহমা-নির রহীম (৩) মা-লিকি ইয়াওমিদ্দীন (৪) ইইয়া-কা না‘বুদু ওয়া ইইয়া-কা নাস্তা‘ঈন (৫) ইহ্দিনাছ ছিরা-ত্বাল মুস্তাক্বীম (৬) ছিরা-ত্বাল্লাযীনা আন‘আমতা ‘আলাইহিম (৭) গায়রিল মাগযূবি ‘আলাইহিম ওয়া লায্ যোয়া-ল্লীন।

অনুবাদ : আমি অভিশপ্ত শয়তান হ’তে আল্লাহর আশ্রয় প্রার্থনা করছি। পরম করুণাময় অসীম দয়ালু আল্লাহর নামে (শুরু করছি)। (১) যাবতীয় প্রশংসা আল্লাহর জন্য, যিনি জগত সমূহের প্রতিপালক (২) যিনি করুণাময় কৃপানিধান (৩) যিনি বিচার দিবসের মালিক (৪) আমরা একমাত্র আপনারই ইবাদত করি এবং একমাত্র আপনারই সাহায্য প্রার্থনা করি (৫) আপনি আমাদেরকে সরল পথ প্রদর্শন করুন! (৬) এমন লোকদের পথ, যাঁদেরকে আপনি পুরস্কৃত করেছেন (৭) তাদের পথ নয়, যারা অভিশপ্ত ও পথভ্রষ্ট হয়েছে’। আমীন! (হে আল্লাহ! আপনি কবুল করুন)।

(৩) ক্বিরাআত : সূরায়ে ফাতিহা পাঠ শেষে ইমাম কিংবা একাকী মুছল্লী হ’লে প্রথম দু’রাক‘আতে কুরআনের অন্য কোন সূরা বা কিছু আয়াত তেলাওয়াত করবে। কিন্তু মুক্তাদী হ’লে জেহরী ছালাতে চুপে চুপে কেবল সূরায়ে ফাতিহা পড়বে ও ইমামের ক্বিরাআত মনোযোগ দিয়ে শুনবে। তবে যোহর ও আছরের ছালাতে ইমাম মুক্তাদী সকলে প্রথম দু’রাক‘আতে সূরায়ে ফাতিহা সহ অন্য সূরা পড়বে এবং শেষের দু’রাক‘আতে কেবল সূরায়ে ফাতিহা পাঠ করবে।

(৪) রুকূ : ক্বিরাআত শেষে ‘আল্লা-হু আকবর’ বলে দু’হাত কাঁধ অথবা কান পর্যন্ত উঠিয়ে ‘রাফ‘উল ইয়াদায়েন’ করে রুকূতে যাবে। এ সময় হাঁটুর উপরে দু’হাতে ভর দিয়ে পা, হাত, পিঠ ও মাথা সোজা রাখবে এবং রুকূর দো‘আ পড়বে। রুকূর দো‘আ : سُبْحَانَ رَبِّيَ الْعَظِيْمِ ‘সুবহা-না রবিবয়াল ‘আযীম’ (মহাপবিত্র আমার প্রতিপালক যিনি মহান) কমপক্ষে তিনবার পড়বে।

(৫) ক্বওমা : অতঃপর রুকূ থেকে উঠে সোজা ও সুস্থিরভাবে দাঁড়াবে। এ সময় দু’হাত ক্বিবলামুখী খাড়া রেখে কাঁধ পর্যন্ত উঠাবে এবং ইমাম ও মুক্তাদী সকলে বলবে ‘ সামি‘আল্লা-হু লিমান হামিদাহ’ (আল্লাহ তার কথা শোনেন, যে তার প্রশংসা করে)। অতঃপর ‘ক্বওমা’র দো‘আ একবার পড়বে।

ক্বওমার দো‘আ : رَبَّنَا لَكَ الْحَمْدُ ‘রববানা লাকাল হাম্দ’ (হে আমাদের প্রতিপালক! আপনার জন্যই সকল প্রশংসা)। অথবা পড়বে- رَبَّنَا وَلَكَ الْحَمْدُ حَمْدًا كَثِيْرًا طَيِّبًا مُّبَارَكًا فِيْهِ ‘রববানা ওয়া লাকাল হাম্দু হাম্দান কাছীরান ত্বাইয়েবাম মুবা-রাকান ফীহি’(হে আমাদের প্রতিপালক! আপনার জন্য অগণিত প্রশংসা, যা পবিত্র ও বরকতময়)। ক্বওমার জন্য অন্য দো‘আও রয়েছে।

(৬) সিজদা : ক্বওমার দো‘আ পাঠ শেষে ‘আল্লা-হু আকবর’ বলে প্রথমে দু’হাত ও পরে দু’হাঁটু মাটিতে রেখে সিজদায় যাবে ও বেশী বেশী দো‘আ পড়বে। এ সময় দু’হাত ক্বিবলামুখী করে মাথার দু’পাশে কাঁধ বা কান বরাবর মাটিতে স্বাভাবিকভাবে রাখবে। কনুই ও বগল ফাঁকা থাকবে। হাঁটুতে বা মাটিতে ঠেস দিবে না। সিজদা লম্বা হবে ও পিঠ সোজা থাকবে। যেন নীচ দিয়ে একটি বকরীর বাচ্চা যাওয়ার মত ফাঁকা থাকে।

সিজদা থেকে উঠে বাম পায়ের পাতার উপরে বসবে ও ডান পায়ের পাতা খাড়া রাখবে। এ সময় স্থিরভাবে বসে দো‘আ পড়বে। অতঃপর‘আল্লা-হু আকবর’ বলে দ্বিতীয় সিজদায় যাবে ও দো‘আ পড়বে। রুকূ ও সিজদায় কুরআনী দো‘আ পড়বে না। ২য় ও ৪র্থ রাক‘আতে দাঁড়াবার প্রাক্কালে সিজদা থেকে উঠে সামান্য সময়ের জন্য স্থির হয়ে বসবে। একে ‘জালসায়ে ইস্তিরা-হাত’ বা ‘স্বস্তির বৈঠক’ বলে। অতঃপর মাটিতে দু’হাতে ভর দিয়ে উঠে দাঁড়িয়ে যাবে।

সিজদার দো‘আ : سُبْحَانَ رَبِّيَ الْأَعْلَى (সুবহা-না রবিবয়াল আ‘লা) অর্থঃ ‘মহাপবিত্র আমার প্রতিপালক যিনি সর্বোচ্চ’। কমপক্ষে তিনবার পড়বে। রুকূ ও সিজদার অন্য দো‘আও রয়েছে।

দুই সিজদার মধ্যবর্তী বৈঠকের দো‘আ :

اَللَّهُمَّ اغْفِرْ لِيْ وَارْحَمْنِيْ وَاجْبُرْنِيْ وَاهْدِنِيْ وَعَافِنِيْ وَارْزُقْنِيْ-

উচ্চারণ : আল্লা-হুম্মাগ্ফিরলী ওয়ারহাম্নী ওয়াজ্বুরনী ওয়াহ্দিনী ওয়া ‘আ-ফেনী ওয়ার্ঝুক্বনী ।

অনুবাদ : ‘হে আল্লাহ! আপনি আমাকে ক্ষমা করুন, আমার উপরে রহম করুন, আমার অবস্থার সংশোধন করুন, আমাকে সৎপথ প্রদর্শন করুন, আমাকে সুস্থতা দান করুন ও আমাকে রূযী দান করুন’।[3]

(৭) বৈঠক : ২য় রাক‘আত শেষে বৈঠকে বসবে। যদি ১ম বৈঠক হয়, তবে কেবল ‘আত্তাহিইয়া-তু’ পড়ে ৩য় রাক‘আতের জন্য উঠে যাবে। আর যদি শেষ বৈঠক হয়, তবে ‘আত্তাহিইয়া-তু’ পড়ার পরে দরূদ, দো‘আয়ে মাছূরাহ ও সম্ভব হ’লে বেশী বেশী করে অন্য দো‘আ পড়বে। ১ম বৈঠকে বাম পায়ের পাতার উপরে বসবে এবং শেষ বৈঠকে ডান পায়ের তলা দিয়ে বাম পায়ের অগ্রভাগ বের করে বাম নিতম্বের উপরে বসবে ও ডান পা খাড়া রাখবে। এসময় ডান পায়ের আঙ্গুলগুলি ক্বিবলামুখী করবে। বৈঠকের সময় বাম হাতের আঙ্গুলগুলি বাম হাঁটুর প্রান্ত বরাবর ক্বিবলামুখী ও স্বাভাবিক অবস্থায় থাকবে এবং ডান হাত ৫৩-এর ন্যায় মুষ্টিবদ্ধ রেখে সালাম ফিরানোর আগ পর্যন্ত শাহাদাত অঙ্গুলি নাড়িয়ে ইশারা করতে থাকবে। মুছল্লীর নযর ইশারার বাইরে যাবে না।

বৈঠকের দো‘আ সমূহ :

(ক) তাশাহ্হুদ (আত্তাহিইয়া-তু):

اَلتَّحِيَّاتُ ِللهِ وَالصَّلَوَاتُ وَالطَّيِّبَاتُ، السَّلاَمُ عَلَيْكَ أَيُّهَا النَّبِيُّ وَرَحْمَةُ اللهِ وَبَرَكَاتُهُ، السَّلاَمُ عَلَيْنَا وَعَلَى عِبَادِ اللهِ الصَّالِحِيْنَ، أَشْهَدُ أَنْ لاَّ إِلَهَ إِلاَّ اللهُ وَأَشْهَدُ أَنَّ مُحَمَّدًا عَبْدُهُ وَرَسُوْلُهُ-

উচ্চারণ : আত্তাহিইয়া-তু লিল্লা-হি ওয়াছ্ ছালাওয়া-তু ওয়াত্ ত্বাইয়িবা-তু আসসালা-মু ‘আলায়কা আইয়ুহান নাবিইয়ু ওয়া রহমাতুল্লা-হি ওয়া বারাকা-তুহু। আসসালা-মু ‘আলায়না ওয়া ‘আলা ‘ইবা-দিল্লা-হিছ ছা-লেহীন। আশহাদু আল লা-ইলা-হা ইল্লাল্লা-হু ওয়া আশহাদু আনণা মুহাম্মাদান ‘আব্দুহূ ওয়া রাসূলুহু 

অনুবাদ : যাবতীয় সম্মান, যাবতীয় উপাসনা ও যাবতীয় পবিত্র বিষয় আল্লাহর জন্য। হে নবী! আপনার উপরে শান্তি বর্ষিত হৌক এবং আল্লাহর অনুগ্রহ ও সমৃদ্ধি সমূহ নাযিল হউক। শান্তি বর্ষিত হউক আমাদের উপরে ও আল্লাহর সৎকর্মশীল বান্দাগণের উপরে। আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আল্লাহ ব্যতীত কোন উপাস্য নেই এবং আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, মুহাম্মাদ তাঁর বান্দা ও রাসূল’ (বুঃ মুঃ)[4]

(খ) দরূদ :

اَللَّهُمَّ صَلِّ عَلَى مُحَمَّدٍ وَّعَلَى آلِ مُحَمَّدٍ كَمَا صَلَّيْتَ عَلَى إِبْرَاهِيْمَ وَعَلَى آلِ إِبْرَاهِيْمَ إِنَّكَ حَمِيْدٌ مَّجِيْدٌ- اَللَّهُمَّ بَارِكْ عَلَى مُحَمَّدٍ وَّعَلَى آلِ مُحَمَّدٍ كَمَا بَارَكْتَ عَلَى إِبْرَاهِيْمَ وَعَلَى آلِ إِبْرَاهِيْمَ إِنَّكَ حَمِيْدٌ مَّجِيْدٌ-

উচ্চারণ : আল্লা-হুম্মা ছাল্লে ‘আলা মুহাম্মাদিঁউ ওয়া ‘আলা আ-লে মুহাম্মাদিন কামা ছাল্লায়তা ‘আলা ইবরা-হীমা ওয়া ‘আলা আ-লে ইব্রা-হীমা ইন্নাকা হামীদুম মাজীদ। আল্লা-হুম্মা বা-রিক ‘আলা মুহাম্মাদিঁউ ওয়া ‘আলা আ-লে মুহাম্মাদিন কামা বা-রক্তা ‘আলা ইব্রা-হীমা ওয়া ‘আলা আ-লে ইব্রা-হীমা ইন্নাকা হামীদুম মাজীদ

অনুবাদ : ‘হে আল্লাহ! আপনি রহমত বর্ষণ করুন মুহাম্মাদ ও মুহাম্মাদের পরিবারের উপরে, যেমন আপনি রহমত বর্ষণ করেছেন ইবরাহীম ও ইবরাহীমের পরিবারের উপরে। নিশ্চয়ই আপনি প্রশংসিত ও সম্মানিত। হে আল্লাহ! আপনি বরকত নাযিল করুন মুহাম্মাদ ও মুহাম্মাদের পরিবারের উপরে, যেমন আপনি বরকত নাযিল করেছেন ইবরাহীম ও ইবরাহীমের পরিবারের উপরে। নিশ্চয়ই আপনি প্রশংসিত ও সম্মানিত’।[5]

(গ) দো‘আয়ে মাছূরাহ :

اَللَّهُمَّ إِنِّيْ ظَلَمْتُ نَفْسِيْ ظُلْمًا كَثِيْرًا وَّلاَ يَغْفِرُ الذُّنُوْبَ إِلاَّ أَنْتَ، فَاغْفِرْ لِيْ مَغْفِرَةً مِّنْ عِنْدَكَ وَارْحَمْنِيْ إِنَّكَ أَنْتَ الْغَفُوْرُ الرَّحِيْمُ-

উচ্চারণ : আল্লা-হুম্মা ইন্নী যালামতু নাফ্সী যুলমান কাছীরাঁও অলা ইয়াগ্ফিরুয যুনূবা ইল্লা আন্তা, ফাগ্ফিরলী মাগফিরাতাম মিন ‘ইনদিকা ওয়ারহাম্নী ইন্নাকা আন্তাল গাফূরুর রহীম’ 

অনুবাদ : ‘হে আল্লাহ! আমি আমার নফসের উপরে অসংখ্য যুলুম করেছি। ঐসব গুনাহ মাফ করার কেউ নেই আপনি ব্যতীত। অতএব আপনি আমাকে আপনার পক্ষ হ’তে বিশেষভাবে ক্ষমা করুন এবং আমার উপরে অনুগ্রহ করুন। নিশ্চয়ই আপনি ক্ষমাশীল ও দয়াবান’।[6]

এর পর অন্যান্য দো‘আ সমূহ পড়তে পারে।

(৮) সালাম : দো‘আয়ে মাছূরাহ শেষে প্রথমে ডাইনে ও পরে বামে ‘আসসালামু আলায়কুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ’ (আল্লাহর পক্ষ হ’তে আপনার উপর শান্তি ও অনুগ্রহ বর্ষিত হৌক!) বলে সালাম ফিরাবে। প্রথম সালামের শেষে ‘ওয়া বারাকা-তুহু’ (এবং তাঁর বরকত সমূহ) যোগ করা যেতে পারে। এভাবে ছালাত সমাপ্ত করে প্রথমে সরবে একবার ‘আল্লা-হু আকবর’ (আল্লাহ সবার বড়) ও তিনবার ‘আস্তাগফিরুল্লা-হ’ (আমি আল্লাহর নিকটে ক্ষমা প্রার্থনা করছি) বলে নিম্নের দো‘আসমূহ এবং অন্যান্য দো‘আ পাঠ করবে। এ সময় ইমাম হ’লে ডাইনে অথবা বামে ঘুরে সরাসরি মুক্তাদীগণের দিকে ফিরে বসবে। অতঃপর সকলে নিম্নের দো‘আ সহ অন্যান্য দো‘আ পাঠ করবে।-

اَللَّهُمَّ أَنْتَ السَّلاَمُ، وَمِنْكَ السَّلاَمُ، تَبَارَكْتَ يَا ذَا الْجَلاَلِ وَالْإِكْرَامِ-

উচ্চারণ : আল্লা-হুম্মা আন্তাস সালা-মু ওয়া মিন্কাস্ সালা-মু, তাবা-রক্তা ইয়া যাল জালা-লি ওয়াল ইকরা-ম ।

অনুবাদ : ‘হে আল্লাহ আপনিই শান্তি, আপনার থেকেই আসে শান্তি। বরকতময় আপনি, হে মর্যাদা ও সম্মানের মালিক’। এটুকু পড়েই উঠে যেতে পারেন। [7] পরবর্তী দো‘আ সমূহ ‘ছালাত পরবর্তী যিকর সমূহ’ অধ্যায়ে দ্রষ্টব্য।

[1] . বুখারী হা/৬৩১, ৬০০৮, ৭২৪৬; মিশকাত হা/৬৮৩, ‘ছালাত’ অধ্যায়-৪, অনুচ্ছেদ-৬।

[2] . মুত্তাফাক্ব ‘আলাইহ, মিশকাত হা/৮১২ ‘তাকবীরের পর যা পড়তে হয়’ অনুচ্ছেদ-১১।

[3] . তিরমিযী হা/২৮৪; ইবনু মাজাহ হা/৮৯৮; আবুদাঊদ হা/৮৫০; ঐ, মিশকাত হা/৯০০, অনুচ্ছেদ-১৪; নায়লুল আওত্বার ৩/১২৯ পৃঃ।

[4] . মুত্তাফাক্ব ‘আলাইহ, মিশকাত হা/৯০৯ ‘ছালাত’ অধ্যায়-৪, ‘তাশাহহুদ’ অনুচ্ছেদ-১৫।

[5] . মুত্তাফাক্ব ‘আলাইহ, মিশকাত হা/৯১৯ ‘রাসূল (ছাঃ)-এর উপর দরূদ পাঠ’ অনুচ্ছেদ-১৬; ছিফাত ১৪৭ পৃঃ, টীকা ২-৩ দ্রঃ।

[6] . মুত্তাফাক্ব ‘আলাইহ, মিশকাত হা/৯৪২ ‘তাশাহহুদে দো‘আ’ অনুচ্ছেদ-১৭; বুখারী হা/৮৩৪ ‘আযান’ অধ্যায়-২, ‘সালামের পূর্বে দো‘আ’ অনুচ্ছেদ-১৪৯।

[7] . মুসলিম, মিশকাত হা/৯৬০, ‘ছালাতের পরে যিকর’ অনুচ্ছেদ-১৮। ‘সালাম ফিরানোর পরে দো‘আ সমূহ’ সংশ্লিষ্ট অধ্যায়ে দ্রষ্টব্য।

Wednesday, November 9, 2016

তাহাজ্জুত নামাজের নিয়মঃ

তাহাজ্জিতের
নামাজের নিয়ম
আরবি ‘তাহাজ্জুদ’ শব্দের
আভিধানিক অর্থ রাত জাগরণ বা
নিদ্রা ত্যাগ করে রাতে নামাজ পড়া।
শরিয়তের পরিভাষায় রাত দ্বিপ্রহরের
পর ঘুম থেকে জেগে আল্লাহর
সন্তুষ্টির জন্য যে নামাজ আদায় করা
হয় তা-ই ‘সালাতুত তাহাজ্জুদ’ বা
তাহাজ্জুদ নামাজ।
বছরের অন্যান্য সময়ের মতো রমজান
মাসে তাহাজ্জুদ নামাজের ব্যাপারে
বিশেষভাবে উৎসাহিত করা হয়েছে।
তাহাজ্জুদ নামাজ যেকোনো সময়ই
অত্যধিক ফজিলতের কারণ। রমজান
মাসে এর সুফল বহুগুণ বেড়ে যায়।
রাসুলুল্লাহ (সা.) তাহাজ্জুদ নামাজ
কখনো ৪ রাকাত, কখনো ৮ রাকাত এবং
কখনো ১২ রাকাত পড়েছিলেন। তাই
রোজাদার ব্যক্তির তাহাজ্জুদ নামাজ
কমপক্ষে ৪ রাকাত আদায় করা উচিত।
কিন্তু যদি কেউ এ নামাজ ২ রাকাত
আদায় করেন, তাহলেও তাঁর তাহাজ্জুদ
আদায় হবে। হজরত ইবনে আব্বাস (রা.)
বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি এশার পর দুই বা
ততোধিক রাকাত নামাজ পড়ে নেয়,
সে হবে তাহাজ্জুদের ফজিলতের
অধিকারী।’ রমজান মাসে তাহাজ্জুদ
নামাজ আদায়কালে পবিত্র
কোরআনের আয়াত খুব বেশি
তিলাওয়াত করা উত্তম। যদি দীর্ঘ
সূরা মুখস্থ থাকে, তাহলে তাহাজ্জুদ
নামাজে দীর্ঘ সূরা তিলাওয়াত করা
উত্তম।
১২ রাকাত তাহাজ্জুদ নামাজের প্রথম
রাকাতে সূরা আল-ইখলাস ১২ বার,
দ্বিতীয় রাকাতে ১১ বার, তৃতীয়
রাকাতে ১০ বার, চতুর্থ রাকাতে ৯ বার
অনুসারে দ্বাদশ রাকাতে একবার
পড়তে হয়।
আবার প্রত্যেক রাকাতে সূরা আল-
ইখলাস ৩ বার অথবা ১ বার হিসেবেও
পড়া যায়। আবার সূরা আল-মুয্যাম্মিল,
আয়াতুল কুরসি এবং সূরা আল-
ইনশিরাহও পড়া যায়।
তাহাজ্জুদ নামায পড়ার জন্য
নির্দিষ্ট কোন সুরা নেই। যে কোন
সুরা দিয়েই এই নামায আদায় করা
যাবে। তবে যদি বড় সুরা বা আয়াত
মুখুস্ত থাকে তবে, সেগুলো দিয়ে
পড়াই উত্তম। কারন রাসুল (সাঃ) সব
সময় বড় বড় সুরা দিয়ে তাহাজ্জুদ
নামায আদায় করতেন। তাই আমাদেরও
বড় সুরা মুখুস্ত করে, তা দিয়ে
তাহাজ্জুত নামাদ আদায় করা উচিৎ।
যাইহোক, বড় সুরা মুখুস্ত না থাকলে
যে কোন সুরা দিয়েই নামায আদায়
করা যাবে। নিয়ম হল ২রাকাত করে
করে, এই নামায আদায় করা। প্রত্যেক
রাকাতে সুরা ফাতিহা পড়ার পর, অন্য
যে কোন সুরা মিলানো। এভাবেই
নামায আদায় করতে হবে।আল্লাহ,
আমাদের সবাইকে তাহাজ্জুদের
পরিপূর্ণ মর্যাদা লাভ করার তৌফিক
দাণ করুন। আমিন.
ফরয নামাজের পর অন্যান্য সুন্নাত ও
নফল সব নামাযের মধ্যে তাহাজ্জুদ
নামাজের গুরুত্ব ফযীলত সবচেয়ে
বেশী (আহমাদ, মেশকাত ১১০ পৃঃ)
রাসুল (সাঃ) বলেন, আমাদের প্রভু
পরওয়ারদিগার তাবারাকা ওয়া
তা’আলা প্রত্যেক রাত্রে দুনিয়ার
আসমানে (যা আমাদের দৃষ্টিগোচর
হয়) নেমে আসেন যখন রাত্রের এক
তৃতীয়াংশ বাকী থাকে । অতঃপর
তিনি বলেন, তোমাদের কে আমাকে
ডাকবে! আমি তার ডাকে সাড়া দেব ।
কে আমার কাছে কিছু চাইবে আমি
তাকে তা দেব, কে আমার কাছে
ক্ষমা প্রার্থনা করবে আমি তাকে
ক্ষমা করে দেব (মুসলিম, মেশকাত ১০৯
পৃঃ)
রাসুল (সাঃ) ইরশাদ করেছেন, যে
ব্যক্তি রাত্রে ঘুম থেকে জেগে
তাহাজ্জুদের নামায পড়ে এবং সে
তার স্ত্রীকেও ঘুম থেকে জাগিয়ে
নামায পড়ায় এমনকি সে যদি জেগে
না উঠে, তবে তার মুখে খানিকটা
পানি ছিটিয়ে দেয় তাহলে তার
প্রতি আল্লাহ রহমত বর্ষণ করে থাকেন
। অনুরুপ কোন মহিলা যদি
রাত্রিকালে জাগ্রত হয়ে তাহাজ্জুদ
নামায পড়ে এবং সে তার স্বামীকে
নামাযের জন্য জাগায় এমনকি স্বামী
না জাগলে স্ত্রী তার মুখে পানি
ছিটিয়ে তার ঘুম ভাঙ্গিয়ে দেয়
তাহলে তার প্রতিও আল্লাহর রহমত
বর্ষিত হতে থাকে (আবু দাউদ,
নাসায়ী, মেশকাত ১০৯ পৃঃ) রাসুল
(সাঃ) বলেন, আল্লাহর নিকট অতি
প্রিয় নামায দাউদ (আঃ) এর নামায ।
তিনি অর্ধেক রাত ঘুমাতেন এবং
রাতেন তৃতীয় ভাগে নামাযে
দাঁড়াতেন আর ৬ষ্ঠ ভাগে আবার
ঘুমাতেন (বুখারী, মুসলিম, মেশকাত
১০৯ পৃঃ)

আসুন সবভাই জানি।

যারা ইমাম আবু হানিফা (রহ)
এর মাসআলা গ্রহণ করেন,
তারা কি তাহিয়্যাতুল
মসজিদ পড়েন???
সকল প্রসংশা আল্লাহর এবং সালাত ও
সালাম তার হাবীব মুহাম্মাদ মুস্তফা (স:)
এবং তার সাহাবীদের উপর, আজ আমরা
আলোচনা করবো তাহিয়াতুল মসজিদের
ব্যাপারে। তাহিয়াতুল মসজিদ বা দুখুলুল
মসজিদ একটি গুরুত্বপূর্ণ সুন্নাত।।। এই
সুন্নাতটির গুরুত্ব বুঝাতে নবী (স:) খুতবা
দেয়ার মাঝে বিরতি দিয়ে করে সালাত
আদায় করতে বলেছেন। যদিও খুতবা
দেয়ার সময় মুসল্লিদের কথা বলা নিষিদ্ধ।
তাই নবী (স:) খুতবার মাঝে বিরতি দিয়ে
হযরত সুলাইক গাতফানী (রাঃ) সালাতের
নির্দেশ দেন এবং সালাত শেষে আবার
খুতবা দেয়া শুরু করেন।।
দলিল হল: জাবির (রাঃ) হতে বর্ণিত ।
তিনি বলেন, নবী করীম (সাঃ) এর খুৎবা
দানকালে সেখানে এক ব্যক্তি আগমন
করেন । তিনি তাকে বলেন, হে অমুক! তুমি
কি (তাহিয়াতুল মাসজিদ) সালাত পড়েছ?
ঐ ব্যক্তি বলেন, না। নবী ( সাঃ ) বলেন,
তুমি দাঁড়িয়ে সালাত আদায় কর । অন্য
হাদীসে বলা হয়েছে তুমি সংক্ষিপ্ত
ভাবে দুই রাকাআত (তাহিয়াতুল মাসজিদ)
সালাত আদায় কর।" [বুখারী হা/৮৮৩ , ৮৮৪ ;
মুসলিম হা/১৮৯৫ , ১৮৯৬ , ১৮৯৭ , ১৮৯৮ , ১৮৯৯ ,
১৯০০ ; তিরমিযী ; ইবনে মাজাহ ; নাসাঈ
হা/১৪০৩ ; আবু দাউদ হা/১১১৫ , ১১১৬ , ১১১৭]
এই দুই রাকাত নামায যে জুমআ'র সুন্নত নয়,
বরং এ যে মসজিদে প্রবেশের(তাহিয়াতুল
মসজিদের নামায) নামায এবং আল্লাহ'র
গৃহের প্রতি সম্মান প্রদশর্ন, আল্লাহ'র
প্রতি আনুগত্যের সিজদাহ ও রাসুল(সাঃ)এর
অবাধ্যতা না করা।
রাসুল(সাঃ) বলেছেনঃ "ইমাম মিম্বরে
বসার আগ পযর্ন্ত যত রাকাত খুশি নফল
নামায আদায় করবে"।( মুসলিম; মুততাকাফ
আলাইহ, আবু দাউদ, মিশকাতঃ হা/১৩৫৮,
১৩৮৪, ৮৭)
"এবং এরপর চুপচাপ মনযোগ সহকারে খুতবা
শুনবে"।(বুখারি; মুসলিম, মিশকাতঃ
হা/১৩৮১-৮২; ফিকহুস সুন্নাহঃ ১/২৩৬)
তবে, সাহাবিরা জুমুআ'র দিন আগে ভাগেই
মসজিদে আসতেন এবং খুতবার আগ পযর্ন্ত
নফল নামায আদায় করতেন। আর সেই অমুক
ব্যাক্তি হলেন সুলাইক গাতফানী (রাঃ),
তিনি যতক্ষণ পর্যন্ত নামায পড়তেছিলেন,
ততক্ষণ পর্যন্ত নবীজী সাঃ খুতবা বন্ধ
রাখেন। যা স্পষ্ট প্রমাণবাহী এটি বিশেষ
কারণে করা হচ্ছে। নতুবা খুতবা বন্ধ রাখার
কোন মানে হয় না।
এখানে কিছু বিষয় লক্ষ রাখতে হবে,
প্রথমত: খুতবার সময় খুতবা শোনা ওয়াজিব,
কথা বলা নিষিদ্ধ,
দলিল হলো: ০১. হযরত সা’লাবা বিন আবি
মালিক আল কুরাজী রাঃ বলেন-“নিশ্চয়
ইমামের মিম্বরে বসা নামায বন্ধ করে
দেয়, আর তার কথা বলা কথাকে বন্ধ করে
দেয়”। {তাহাবী শরীফ, ১/৩৭০, হাদীস
নং-২০১৪} এই হাদীসটি সহীহ।
০২. হযরত আবু হুরায়রা রাঃ বলেন-রাসূল
সাঃ ইরশাদ করেছেন-যখন তুমি তোমার
পাশের জনকে জুমআর দিন বল-চুপ থাক
এমতাবস্থায় যে, ইমাম সাহেব খুতবা
দিচ্ছে, তাহলে তুমি অযথা কাজ করলে।
(সহীহ বুখারী: ৮৮৭, সহীহ মুসলিম: ২০০৫, আবু
দাউদ: ১১১২, ইবনে মাজাহ: ১১১০, মুয়াত্তায়
মালিক: জুম্মার সালাত অধ্যায়:
রেওয়াত:৬, নাসায়ী শরীফ: ১৪০৪, ১৪০৫,
তিরিমিজি: ৪৮১)
দ্বিতীয়ত: জুম্মার দিন আজানের পড়েই
মসজিদে যেতে হবে, কেননা জুম্মার
আজানের পড়ে সকল দুনিয়াবি কাজ হারাম
করা হয়েছে।
দলিল হল:
০১. মুমিনগণ, জুমআর দিনে যখন নামাজের
আযান দেয়া হয়, তখন তোমরা আল্লাহর
স্মরণের পানে তাড়াতাড়ি করো এবং
বেচাকেনা বন্ধ কর । এটা তোমাদের জন্যে
উত্তম যদি তোমরা বুঝ ।” (আল-জুমুয়াহ ৬২:৯)
০২. ইবনে আওস (রা:) থেকে বর্নিত: তিনি
বলেন, রাসুল (স:) আমাকে বললেন-যে
ব্যক্তি গোসল করল, সকাল সকাল মসজিদে
আসলো, আমামের নিকটবর্তি হয়ে
মনোযোগ সহকারে খোৎবা শুনলো এবং
নিশ্চুপ থাকল-তার জন্য প্রতি কদমের
বিনিময়ে এক বছরের (নফল) রোজা ও
নামাজের সাওয়াত রয়েছে। তিরমিজি
শরীফ:৪৪৬ (আবু ঈসা বলেন-এ হাদিসটি
হাসান)
তৃতীয়ত: তারাতারী মসজিদে গিয়ে
দু'রাকাত সালাত আদায় করতে হবে। দু্ই
রাকাত সালাত শুধু জুম্মার দিনে নয়
প্রত্যেক সময় যখন আপনি মসজিদে ঢুকবেন
তখনই পড়তে হবে।
দলিল হল: আবু কাতাদাহ (রাঃ) হতে
বর্ণিত । তিনি বলেন ,রাসূলুল্লাহ (সাঃ)
বলেছেন, যখন তোমাদের কেউ মসজিদে
প্রবেশ করবে, তখন সে যেন দু’রাকাত
সালাত আদায় করা ব্যতীত না
বসে।" [বুখারী হা/৪৪৪ , ১১৬৭ ; মুসলিম হা/
৭১৪ ; তিরমিযী হা/ ৩১৬ ; নাসাঈ হা/ ৭৩০ ;
আবু দাউদ হা/ ৪৬৭ ; ইবনু মাজাহ হা/ ১১২৩ ;
আহমাদ হা/ ২২০১৭ , ২২০৭২ , ২২০৮৮ ,
২২১৪৬ ;দারেমী হা/ ১৩৯৩ ; রিয়াদুস
সালেহীন হা/ ১১৫১]
চতুর্থত: জুম্মার খুতবার আগে চার রাকাত
ক্বাবলাল জুম্মা পড়তে হবে, যেটা
আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা:) এর সহীহ
হাদিস দ্বারা প্রমানিত।
দলিল হল:
০১. আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা:) জুম্মার
(ফরযের ) পূর্বে চার রাকাত এবং পরে চার
রাকাত (সুন্নাত) নামায আদায় করতেন।
তিরমিজি: ৫২৩-আলবানী (রহ) সহীহ
বলেছেন”
০২. আরো হাদিস পাওয়া যায়, তার মধ্যে
একটি হাদিস নিম্মরুপ: ইবনে আব্বাস (রা:)
থেকে বর্নিত, তিনি বলেন: নবী (স:)
জুম্মার (ফরয) সালাতের পর্বে চার রাকাত
সালাত আদায় করতেন এবং এর মধ্যে কোন
ব্যবধান করতেন না (বরং এক সালামে চার
রাকাত আদায় করতেন)ইবনে মাজাহ: ১১২৯
বায়দাল জুম্মার ব্যাপারে অনেক হাদিস
আছে, তার মধ্যে একটি নিম্মরুপ:
আবু হুরাইরা (রা:) থেকে বর্নিত তিনি
বলেন, রাসুল (স:) বলেছেন: তোমরা জুম্মার
(ফরয) সালাতের পর সালাত আদায় করলে
চার রাকাত (সুন্নাত) সালাত আদায় করবে।
ইবনে মাজাহ: ১১৩২
পঞ্চমত: দুই রাকাত তাহিয়াতুল মসজিদ
পড়া একটি নফল সুন্নাত, কিন্তু গুরুত্ব অনেক।
(তাহাজ্জুতের সালাতের গুরুত্ব অনেক
কিন্তু নফল)
ষষ্ঠত: কেউ যদি খুতবার সময় মসজিদে
প্রবেশ করে তবে সে ব্যাপারে হুকুম কি
হবে?
উত্তরে একটু গভির ভাবে চিন্তা করলেই
অনুধাবন করা যায়। নবী (স:) খুতবা বিরতি
দিয়ে সাহাবীকে সালাত আদায় করার
নির্দেশ দিয়েছেলেন। খুতবা চলাকালীন
নয়। আর সেই অমুক ব্যাক্তি হলেন সুলাইক
গাতফানী (রাঃ), তিনি যতক্ষণ পর্যন্ত
নামায পড়তেছিলেন, ততক্ষণ পর্যন্ত
নবীজী সাঃ খুতবা বন্ধ রাখেন। যা স্পষ্ট
প্রমাণবাহী এটি বিশেষ কারণে করা
হচ্ছে। নতুবা খুতবা বন্ধ রাখার কোন মানে
হয় না। কারণ খুতবা চলাকালীন খুতবা
শোনাই ওয়াজিব। নফল এবং সুন্নাতের
চেয়ে ওয়াজিবের গুরুত্ব অনেক বেশি।
এক্ষেত্রে সেই ব্যক্তি কাবলাল জুম্মাও
পড়তে পাড়বেন না, তারণ খুতবা শুরু
হয়েগেছে।। এব্যাপারে বিশেষজ্ঞদের
মাঝে মতভেদ দেখা যায়, ইমাম শাফেয়ী
বলেন, খুতবা চলাকালীন সময়ে এই দুই
রাকাত সালাত আদায় ব্যতিক্রম (করতে
পারবে) কিন্তু অন্যান্য ইমামগন এ এবিষয়ে
এক মত যে জুম্মার খুতবা চলাকালীন কোন
ব্যাক্তি যদি মসজিদে প্রবেশ করে তবে
তার জন্য কোন সালাত নেই, এমনকি
ক্বাবলাল জুম্মাও।
আর এটা খুবই অস্বাভাবিক যে ইমাম
প্রত্যেক ব্যক্তির জন্য খুতবার মধ্যে বিরতি
দিবেন।।।
সপ্তমত: অনেক দলিল আছে যেখানে নবী
(স:) তুহিয়াতুল মসজিদ সালাত আদায় করতে
বলেন নি।
দলিল হলো:
০১. একদা ইবনে মাসউদ রাঃ রাসূল সাঃ
মিম্বরে বসা অবস্থায় মসজিদে প্রবেশ
করলেন। রাসূল সাঃ সবাইকে বসে পড়ার
হুকুম করলেন। সে সময় ইবনে মাসউদ রাঃ
মসজিদে নববীর দরজায় ছিলেন। তিনি
সেখানেই বসে গেলেন। তখন রাসূল সাঃ
বললেন-“ইবনে মাসউদ! তুমি আগে চলে আস”!
{সুনানে আবু দাউদ-১০৯১} আগে এসে বসার
কথা বলেছেন কিন্তু তাঁকে তাহিয়্যাতুল
মসজিদ পড়ার হুকুম দেন নি।
০২. ইস্তিস্তাকার হাদীসে এক ব্যক্তি
রাসূল সাঃ এর কাছে বৃষ্টি না হওয়ার
অভিযোগ নিয়ে আসে, তখন সে ফিরে
গিয়ে এক সপ্তাহ পর আবার বন্যা হওয়ার
সংবাদ নিয়ে আসে। এই সাহাবী উভয়
দাবি নিয়ে এসেছিলেন এমন সময় যখন
রাসূল সাঃ খুতবা দিচ্ছিলেন, {বুখারী
শরীফ, নামাযে ইস্তিস্কা অধ্যায়} তাঁকেও
রাসূল সাঃ তাহিয়্যাতুল মসজিদ পড়ার
নির্দেশ দেন নি।
০৩.ইবনে শিহাব(রহ:) সা’লাবা ইবনে আবি
মালিক কুরাজী (রহ:) থেকে বর্নিত, তিনি
(সা’লাবা) তাহার নিকট হবে বর্ননা
করিয়াছেন যে, উমর ইবন খাত্তাব (রা:) এর
খিলাফাতকালে জুম্মার দিন তাহারা
উমর ইবনে খাত্তাব (রা:) আগমন করা
পর্যন্ত নামায পড়িতেন। উমর (রা:) আগমন
করিতেন এবং মিম্বরে বসিতের এবং
মুয়াযযিনগন আযান দিতেন। সা’লাবা (রহ:)
বলেন: আমরা তখনও পরস্পর কথাবার্তা
বলিতাম. মুয়াযযিন যখন আযান শেষ
করিতেন এবং উমর (রা:) খুতবা পাঠ করার
জন্য দাড়াইতেন, তখনআমরা চুপ হইয়া
যাইতাম। অত:পর কেউ কোন কথা বলিতেন
না। ইবন শিহাব (রহ:) বলেন(ইহাতে
বোঝাগেল) ইমামের আগমন নামাযকে
নিষিদ্ধ করিয়া দেয় এবং তাহার কালাম
(খুতবা) কথাবার্তাকে নিষিদ্ধ করিয়া
দেয়।(মুয়াত্তা মালিক, রেওয়াত:৭, জুম্মার
সালাত অধ্যায়)